বাংলার ঐতিহ্যের অন্যতম প্রতীক ইলিশ মাছ, যা পান্তা ভাতের সঙ্গে যুগ যুগ ধরে বাঙালির রসনাতৃপ্তির উপাদান হিসেবে বিবেচিত। এক সময় ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার পাতে উঠলেও এখন এই প্রিয় মাছটি যেন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
কলাপাড়ার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশের দাম এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নিম্নআয়ের তো বটেই, মধ্যবিত্তরাও কিনতে ভয় পাচ্ছেন। বাজারে জাটকা আকৃতির ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকা দরে, মাঝারি সাইজের ইলিশ ১৪০০ থেকে ১৭০০ টাকা, আর এক কেজি ওজনের বড় ইলিশের দাম ২৮০০ টাকার উপরে।
কলাপাড়া পৌর শহরের মাছ বাজারে দেখা যায়, নিত্যপণ্য কিনতে আসা ভ্যানচালক সুমন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘পরিবারের ইলিশ খাওয়ার আবদার রাখতে বাজারে এসেছিলাম। কিন্তু দাম শুনেই মাথা ঘুরে গেল। এতো টাকা দিয়ে ইলিশ কিনে খাওয়া আমাদের মতো গরিবের পক্ষে অসম্ভব।’
একইভাবে ইমারত নির্মাণ শ্রমিক রাছেল জানান, ‘বাবা-মায়ের জন্য ইলিশ কিনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এক কেজি মাছের দাম প্রায় তিন হাজার টাকা! সাধ থাকলেও সাধ্যে কুলাচ্ছে না।’
অপর ক্রেতা তুষার বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশের দাম দ্বিগুণ। এটা সাধারণ মানুষের পক্ষে কেনা সম্ভব নয়।’
এমনকি ইলিশ বিক্রেতা রজ্জবও বলেন, ‘আমি মাছ বিক্রি করি, কিন্তু নিজে ঘরে ইলিশ নিতে পারিনি। পরিবারের জন্য বড় একটা ইলিশ কিনলে চাল-ডালের বাজেটেই টান পড়ে যাবে।’
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম এবং দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে ইলিশের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। পটুয়াখালীর মহিপুর ও আলীপুরের মতো বড় বড় মৎস্য বন্দরে প্রচুর মাছ উঠলেও তার দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
কলাপাড়া সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, ‘গত দুই সপ্তাহে প্রায় ১৩০ টন ইলিশ ধরা পড়লেও বৈরী আবহাওয়ায় মাছ ধরা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, ফলে দাম বেড়ে গেছে। তবে সরকারিভাবে ইলিশের দাম নির্ধারণের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’
এদিকে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
সাধারণ মানুষের দাবি, অবিলম্বে সরকারিভাবে ইলিশের মূল্য নির্ধারণ এবং বাজার মনিটরিং জোরদার করা না হলে এই জাতীয় মাছ সাধারণের জন্য শুধুই রয়ে যাবে স্বপ্নের পাতে।